ছিলেন শারীরিক প্রতিবন্ধী, শিক্ষকরা বানালেন শিক্ষা প্রতিবন্ধী

ছোটবেলা থেকেই ক্রিকেটের প্রতি আগ্রহ থাকলেও ছিলো না খেলার সুযোগ। হুইলচেয়ারে বসেও যে ক্রিকেট খেলা যায় সে ধারণাই ছিল না হোসাইনের। ছোটবালায় গ্রামের বন্ধুদের সাথে খেলতেন কষ্ট করে, মাটিতে বসে বসে। হুইলচেয়ার ক্রিকেট দলের অধিনায়ক  সাথে পরিচয়ের পর রাজন শিখে ফেলেছেন কীভাবে হুইলচেয়ারে বসেও চার-ছক্কা হাঁকানো যায়। ১৯৮৮ সালে দোবাদিয়া উত্তরখান গ্রামে সুস্থভাবেই জন্ম হয়েছিল রাজনের। কিন্তু দুই বছর বয়সে হলো সর্বনাশা জ্বর। চিকিৎসক ঠিক বুঝতে পারলেন না রোগটা কী! দেওয়া হলো নিউমোনিয়ার ঔষধ। কিন্তু পরে জানা গেল পোলিওতে আক্রান্ত ছিলেন রাজন। প্রথমে বেশ কিছুদিন পুরো শরীরই অবসই হয়ে ছিল তার। পরে ধীরে ধীরে শরীরের উপরের ভাগ কাজ করা শুরু করলেও কোমড়ের নিচের অংশ নিথরই থেকে গেছে। যদিও এত বড় শারীরিক অক্ষমতাও রাজনের স্বপ্নের লাগাম টানতে পারেনি। হুইলচেয়ারে বসেই দেশের প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছেন। 

আমেনা কিন্ডারগার্টেন ও সিভিল এভিয়েশন হাই স্কুল থেকে পড়াশুনা করেছেন। উত্তরা আনোয়ারা মডেল কলেজ ও ইউনিভার্সিটি থেকে এইসএসসি শেষ করে ভর্তি হয়েছিলেন সরকারী কলেজে। কিন্তু শেষ করতে পারেননি। শেষ না করতে পারার কারণ জানাতে গিয়ে প্রিয়.কমকে জানালেন তার জীবনের সবচেয়ে কষ্টের অভিজ্ঞতার কথা।রাজন বলেন, ‘অনেক স্বপ্ন নিয়ে ওখানে (সরকারী তিতুমীর কলেজ) ভর্তি হয়েছিলাম। কিন্তু তাদের জন্যই আমার পড়াশুনাটা শেষ হলো না। মাঝ পথেই ছেড়ে দিতে হলো। এমনিতেই আমি হাঁটতে পারি না। এর মধ্যে একবার বাসে উঠতে গিয়ে অ্যাসিডেন্ট করলাম। তখন শিক্ষকদের কাছে বললাম আমাকে সপ্তাহে তিনদিন ক্লাস করার অনুমতি দেওয়া হোক। কিন্তু তারা দেননি। তারা জানান, ক্লাস না করলে পরীক্ষা দিতে দেবেন না। অথচ প্রতি বছর অনেকেই কোনও ক্লাস না করেও পরীক্ষা দেয়।’গ্রাজুয়েট না হতে পারলেও জীবন চালাতে ক্রিকেটের পাশাপাশি একটা ছোট চাকুরি করছেন রাজন। একটি প্রতিষ্ঠানে ডাটা-এন্ট্রির কাজ করেন। কৃষক বাবা হাজী মোঃ সামসুল হক ও গৃহিণী পিয়ারা খাতুনের পরিবারে দুই ভাই এক বোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি। ২০১৫ সালে বিয়ে করেছেন ফারহানা আকতার পপিকে।জীবনে অনেক কষ্টের অধ্যায় পার করা রাজনের মধুর স্মৃতিও আছে। তেমনই একটি ঘটনা জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘নেপাল আর ভারতের বিপক্ষে খেলা জীবনের অনেক বড় পাওয়া। কিন্তু ভারতকে হারানো সেই ম্যাচটি কোনোদিন ভুলবো না। আমাদের দুই রান লাগে এক বলে, সেটা করে আমরা যখন জিতে গেলাম, উইকেটে আমি আর মহসিন ভাই কাঁদছিলাম। সেই দৃশ্য আমি কোনও দিনও ভুলবো না।’  ক্রিকেটের বড় পরিসরে যার হাত ধরে আসা সেই মহসিনকেই নিজের আদর্শ মনে করেন রাজন। তবে ক্রিকেটে সবচেয়ে পছন্দ বাংলাদেশ জাতীয় ওয়ানডে দলের অধিনায়ক। মাশরাফিতে মুগ্ধ রাজন বলেন, ‘মাশরাফি ভাই যেভাবে সবাইকে আগলে রাখে, সবাইকে ভালোবাসেন সেটাই ভালো লাগে। আমার সাথে যখনই দেখা হয় আমার খোঁজ নেন। আমাদের মহসিন ভাইও তেমন।’

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment